ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চাঞ্চল্যকর হত্যার চার্জশিট চূড়ান্ত করে আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে।
যেভাবে দিনদুপুরে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে আগুনে পুড়িয়ে রাফিকে হত্যা করা হয়েছে, তাতে এ মামলার হুকুমের আসামিসহ সংশ্লিষ্ট সবার কঠোর শাস্তির সুপারিশই কাম্য।
খুনের ধরন ও প্রকৃতি এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আদালত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবেন এবং প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
গত ৬ এপ্রিল আলিম আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে বলে নুসরাতকে ডেকে নেয় তারই কয়েকজন বোরকাপরা সহপাঠী। পরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য রাফিকে চাপ দেয়া হয়।
কিন্তু রাফি সেটি করতে অস্বীকার করলে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে তার মায়ের করা যৌন নিপীড়নের মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, রাফি যৌন নিপীড়নের মামলা করে আলেমসমাজকে হেয় করেছে- এ কথা বলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ। এই মামলায় সংশ্লিষ্ট ১২ অপরাধী ও ৯২ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চার্জশিট তৈরি করেছে পুলিশের পেশাদার তদন্ত শাখা পিবিআই।
সংস্থাটি বলেছে, রাফি হত্যার ঘটনা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ও সতর্কতার সঙ্গে অপরাধীরা বিভিন্ন স্তরে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করে।
উদ্বেগের বিষয়, রাফি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বাঁচাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ প্রশাসন সবাই অপরাধীদের পক্ষ নিয়েছিল। অধ্যক্ষ সিরাজকে বাঁচানোর জন্য স্থানীয় এসপি, ওসি, এমনকি এডিএম পর্যন্ত ভিন্ন খাতে মামলাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
তবে আশার কথা, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পিবিআই দ্রুত তদন্ত করে মাত্র ১ মাস ২১ দিনের মাথায় চার্জশিট দাখিল করেছে। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাফির ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডটির ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবকিছু ইতিবাচক বলা যায়। আমরা আশা করব, মামলাটির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
শুধু রাফি হত্যা নয়, চলন্ত বাসে ধর্ষণ-হত্যা থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নসহ নারী নির্যাতন যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে দেশে। রাফি হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার দ্রুত বিচার কাম্য।
পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠনে হাইকোর্টের আদেশের অবস্থা কী, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ দেশজুড়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অসংখ্য ‘সিরাজ’ ঘাপটি মেরে আছে।
নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য নির্যাতনকারী ও ঘাতকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, রাফি হত্যার তদন্তকে দৃষ্টান্ত ধরে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া হবে।