বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ করে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছেন। অল্প জায়গায় ও স্বল্প পুজিতে দেখছেন লাভের মুখ।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের বস্তায় আদা চাষের ওপর প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। সেইসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা প্রদর্শনী স্থাপন করছি যাতে কৃষকরা বস্তায় আদা চাষে আরও আগ্রহী হয়। পতিত জমির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং আধুনিক উপায়ে আদার উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প বস্তায় আদা চাষের ওপরে গুরুত্ব দিয়ে উপজেলায় প্রদর্শনী স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা হাতে কলমে বস্তায় আদা চাষ শিখছেন এবং নিজ নিজ বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ করছেন।
আরও জানান, কৃষিকে লাভজনক ও আধুনিক করতে নতুন কৃষি প্রযুক্তি আমরা কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনী আকারে স্থাপন করেছি। বস্তায় আদা চাষটা মাটিতে চাষাবাদের তুলনায় লাভজনক ও নতুন প্রযুক্তি। তাই এটি আমরা স¤প্রসারণে কাজ করছি।
মেডিসিন ও নিউরো স্পেশালিস্ট ডা. আজিজুল হক বলেন মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা খুবই পরিচিত একটি ফসল। যা খাবারের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সম্পন্ন আদা নানা ধরনের রোগ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সরেজমিনে বিভিন্ন আদার জমিতে গিয়ে দেখা যায় কলা, আম বাগানসহ বিভিন্ন বড় গাছের মধ্যে সারি করে সাজানো আদার বস্তা। শ্রমিক সেখানে পরিচর্যা করছেন। পাঁচ-ছয়জন নারীকে দেখা যায় হাত দিয়ে বস্তায় সার দিচ্ছেন, সঙ্গে পুরুষেরা আদার পরিচর্যায় ব্যস্ত। বস্তাগুলোকে বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন তারা।
জিয়ানগর ইউনিয়নের জলঙ্গী গ্রামের কৃষক আবু সাইদ বলেন জমিতে আদা চাষ করা ঝামেলা, বৃষ্টি-খরায় ঠিকমতো হয় না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ দেয়। কিন্তু বস্তায় কীভাবে আদা চাষ করতে হয় সেটা জানতাম না। পরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিলাম। সেখানে কীভাবে বস্তায় আদা চাষ করে, কীভাবে পরিচর্যা করে সেটা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছি।
গোবিন্দপুরের আলতাফনগরে ফজলুর রহমান তার ২৫ শতক জায়গার আম বাগানের নিচে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে প্লাস্টিকের বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে বীজ সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে এই আদা চাষ করেছেন।
১৫শ’ বস্তায় তার এই আদা চাষ করতে বীজ, বস্তা কেনা ও সার বাবদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আদা গাছগুলো অনেক বড় হয়ে উঠেছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি আদা উত্তোলন করতে পারবেন বলে আশা করছেন। প্রতি বস্তায় দেড় কেজি আদা উৎপাদন হবে। এতে খরচ বাদ দিয়েও দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।
আলোহালী গ্রামের কৃষক আবুল জানান, জমিতে আদা চাষ করলে অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় জমির আদা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া জমিতে অনেক সময় পাহারাও দিতে হয়। পরিত্যাক্ত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ সহজ হওয়ায় তিনি ১১শ’ ৫০ বস্তা আদা চাষ করেছেন।
একই এলাকার জলঙ্গি গ্রামের কৃষক ধনঞ্জয় জানান, তিনিও ৯শ’ বস্তা আদা চাষ করেছেন। তারা আরো জানান, বৃষ্টির পানি বস্তায় পড়লেই চুষে নেওয়ার সাথে সাথে নেমেও যায়। এতে আদা পচে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। ফলে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. সালমা আকতার বলেন, যেকোনো পরিত্যক্ত জায়গা, বসতবাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবণাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে, স্থায়ী ফল বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে, সহজেই চাষ করা যায়। একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়। প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ টাকা খরচ করে এক-তিন কেজি আদা পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজেদুল আলম জানান, বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের মাঝে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ , পরামর্শসহ নানাবিধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃষকদের বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ লাভজনক হওয়ায় ভোক্তাদের মাঝে আদা চাষের আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, বগুড়া আদা একটি মসলা জাতীয় ফসল এবং এর বাজার দর সব সময়ই ভালো। বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে আদার উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে কম খরচে কৃষক বেশি ফলন পেতে পারে। এজন্য আমরা সার্বক্ষনিক কৃষকদের সহযোগিতা করছি।