আগামীর রাষ্ট্রনায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারি আ’লীগ সরকারের দায়েরকৃত উদ্দেশ্য প্রণোদিত সকল রাজনৈতিক, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার ও বেকসুর খালাসের দাবি জানিয়েছেন বগুড়াবাসী। সেইসাথে তারেক রহমান দেশে ফেরার বিষয়ে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জোড়ালো দাবি জানানো হয়েছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় বিএনপির লাখো নেতাকর্মী।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দম্পতির বড় ছেলে তারেক রহমান। তাঁর ডাক নাম পিনু। তবে তিনি তারেক জিয়া নামেই বেশি পরিচিত। তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর। ২০০৯ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এর আগে ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।
বিগত দুই সরকারের আমলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ৩৩টি মামলার তথ্য জানাতে পেরেছেন দলের আইনজীবীরা। এর মধ্যে এক-এগারোর সরকারের সময় হয়েছে ১৭টি মামলা। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে ১৬টি। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা, বিভিন্ন জেলায় মানহানি মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব মামলার সঠিক পরিসংখ্যান বিএনপি আইনজীবীদের কাছে নেই।
সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের আন্দোলনের মুখে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা-সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৭ মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়া হয়। প্রায় ১৮ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। এ সময়ের মধ্যে তারেক রহমানকে ১৩ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় ধাপে ধাপে তাকে জামিন দেওয়া হয়।
২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তিনি। ৮ দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর তারেক লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেই থেকে তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে লন্ডনে বসেই বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
বিএনপি নেতারা জানান, এক-এগারোর তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে তারেকের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও ২০টির বেশি মামলা হয়েছে। তবে বিএনপির আইনজীবীরা জানান, মানহানির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে এখনো সেভাবে জানা যায়নি।
তারেকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে করা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সব মামলাতেই তাকে পলাতক দেখিয়ে বিচারকাজ ও সাজা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক মামলায় তাঁর জামিন বাতিল করে পলাতক দেখিয়ে বিচার কাজ শুরু করে। তবে বহুল আলোচিত অর্থপাচার মামলায় নিম্ন আদালতে তারেক বেকসুর খালাস পান।
বগুড়া সুশীল সমাজ বলেন আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি, যেখানে কারও কোনো ভয় নেই। সবাই আমরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে একত্র হয়ে কথা বলছে পারছি। অথচ মাত্র কমাস আগেও এই দেশের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে কথা বলতে পারত না। ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ।
বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বগুড়া জেলা সহ সারাদেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতা-কর্মীকে আমরা হারিয়েছি। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসে ছিল, জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
আমরা অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তারা আরো বলেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার না করলে সকল পেশাজীবী সমাজ আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। একইসঙ্গে জুলাই গণহত্যার আসামি পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যদের দেশে ফেরত এনে বিচারে মুখোমুখি করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দাবি অন্তর্র্বতী সরকার অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দেশে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তন তথা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। তারা বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতা দীর্ঘ ১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংগ্রামে বিরামহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম খাইরুল বাসার বলেন অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে আসছে বিএনপি। সরকারের দুই মাস মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ দলের নেতাকর্মীরা। অবিলম্বে অর্ন্তবর্তী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও জোড় দাব করছি।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শহড় বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড. হামিদুল হক চৌধুরী হিরু বলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতা দীর্ঘ ১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংগ্রামে বিরামহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক। আরো বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দায়েরকৃত মামলাগুলোর ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, প্রতিটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক দাবি করে তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে কয়েকটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্রুত মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বিএনপি নেতা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মামলাগুলো তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে এখনও বাধা। আইনি পথে মামলা মোকাবিলার কথাও বলেছেন তারা। ‘তিনি যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তিনি চান না আইনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হোক। সেজন্য উপযুক্ত সময়ে তিনি দেশে ফিরে যাবেন বলে আমরা মনে করি।’