আমি সাধারণত রাতে গোসল করি না। শীতকালে তো প্রশ্নই ওঠে না। আজ করছি, অনেক ধকল সয়েছি সারাদিন। এতদিন মাথার ওপর চেপে বসা বোঝাটা নামল অবশেষে। বলা যায় আজকের দিনটার জন্যই বেঁচে ছিলাম গত দুই বছর। তবে কাজটা ঠিক না বেঠিক ছিল, বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমি এ কাজের পেশাদার কেউ নই।
পাক্কা দশ মিনিট ধরে শুয়ে আছি বাথটাবে। নাক পর্যন্ত পানির নিচে। বাথটাব একদিকে হেলে আছে, মনে হয় সে-ও আজ আমার ভার নিতে নারাজ। কেন যেন উঠতে ইচ্ছে করছে না। সুমাইয়ার খুব শখ ছিল বাথটাবের। সবসময় বলতো, আমাদের বাথরুমে কমোড না থাকলেও বাথটাব থাকতে হবে। নাক পর্যন্ত ডুবে থাকব ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কানের পাশে মৃদু শব্দে বাজতে থাকবে রাহাত ফতেহ আলি খানের কোন গান। হঠাৎ মুঠোফোনের শব্দে ভাবনাচ্যুতি। অফিসের পিয়ন সালামের কল। সম্ভবত কক্সবাজারের এয়ার টিকেটের ব্যবস্থা করতে পেরেছে।
বিজয় দিবসের আগে শুক্র-শনি যোগ হয়ে বেশ লম্বা ছুটি এবার। অসম্ভব মানসিক চাপে ছিলাম গত দুই বছর। ভেবেছিলাম আজকের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। হল উল্টো। কাজটার পর ধরেছে ভালো না লাগা রোগ। কিছুদিন একা থাকা দরকার। সমুদ্রপাড়ে কয়েকদিন কাটিয়ে আসলে মন্দ হয় না। এতে যদি রোগটারও কোন সুরাহা হয়। হুট করে সালামকে ফোন করে টিকিটের কথা বলে বসলাম। রাতের মধ্যেই ব্যবস্থা করে ফেলেছে ছেলেটা। বেশ করিৎকর্মা লোক। কাল সকালে ফ্লাইট।
কক্সবাজার যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল সুমাইয়ার। বারকয়েক যাওয়ার সুযোগ হয়ে হয়েও হয়নি। আমারও সামর্থ ছিল না নিয়ে যাওয়ার। এখন সামর্থ আছে কিন্তু সুমাইয়া নেই। আল্লাহ সব সুখ মানুষকে একসাথে দেন না। দিলে মানুষ নাফরমান হয়ে যায়। আমিও নাফরমানদের তালিকায় কি-না কে জানে? ভালো কোন হুজুরকে সব খুলে বলে জেনে নিতে হবে। অনেকটা খ্রিষ্টানদের কনফেকশনের মত আর কী।