নৈতিকতায় কতটা পচন ধরলে কিছু মানুষ পয়ঃশোধনাগারের লেগুনে মাছ চাষের মতো কাজে যুক্ত থাকতে পারে তারই বিবরণ উঠে এসেছে সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
রাজধানীর শ্যামপুরের ওয়াসার ‘পাগলা পয়ঃশোধনাগারে’র লেগুনে মাছ চাষের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, অনুমোদন নেই ওয়াসারও। কিন্তু তারপরও সেখানে মাছ চাষের ঘৃণ্য কাজটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে একাধিক বৈজ্ঞানিক সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে লেগুনের মাছ বিষাক্ত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এরপর লেগুনগুলো লিজ দেয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও লেগুনে মাছ চাষ বন্ধ হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতা ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় লেগুনে মাছ চাষ করে। এসব মাছ রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর লাখ লাখ মানুষের প্রাত্যহিক বর্জ্যসহ বিভিন্ন রকম বর্জ্য ও নর্দমার দূষিত পানি যেসব লেগুনে জমা হয়, সেসব জলাশয়ে চাষ করা মাছে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব মাছ খেলে মানুষের কিডনি, যকৃতসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে ক্রেতাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কোনটি লেগুনের বিষাক্ত মাছ আর কোনটি ভালো মাছ।
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ওয়াসার কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জের বিপুলসংখ্যক ভোক্তা লেগুনের বিষাক্ত মাছ খেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা অকল্পনীয়।
এসব মাছ খেয়ে মানুষের কী ক্ষতি হচ্ছে, এ বিষয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়া দরকার। লেগুনে মাছ চাষের গোপন কাজে যারা সরাসরি এবং যারা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা না হলে এ ঘৃণ্য কাজ বন্ধ হবে না।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী লেগুনের মাছ নিধনের কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ কাজে কেউ অবহেলা করলে তাকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
কেউ লেগুনে মাছ চাষের চেষ্টা করে কিনা, স্থানীয় জনগণকেও এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তির অপকর্মের কারণে যাতে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে।