• December 12, 2024, 8:48 am

বগুড়া যমুনার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন অনেক কৃষক

বগুড়া অফিস :: 20 Time View :
Update : Thursday, December 5, 2024

বগুড়া যমুনার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন অনেক কৃষক। এক সময় এ সব চর অনাবাদি থাকত। চাহিদার কারণে এখন চরগুলো নানা ফসলে ভরপুর। চরের কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে চর ছেড়ে উপজেলা সদর এমনকি জেলা শহরেরও বসতি গড়েছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া সারিয়াকান্দির ১২ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় সবই যমুনা ও বাঙালি নদীর তীরবর্তী। এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে বাঙালি ও সুখদহ নদী বহমান। পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নের আংশিক ও তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ যমুনা নদীগর্ভে। ফলে আগে নদী তীরবর্তী বিশালাকার চারণভূমি অনাবাদি থাকত।

তাছাড়া যমুনা, বাঙালি ও সুখদহ নদীর নাব্যতা না থাকায় এর অববাহিকায় পলি পরে বিশালাকার কৃষি জমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৃষিজমিতে পানির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসলাদি চাষ করতে পারতো না। ফসল ফলানোর জন্য আগে বৃষ্টির পানিই ছিল একমাত্র ভরসা; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার উত্তপ্ত বালুচর আর অনাবাদি ফেলে না রেখে সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। আগের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল বেশি চাষাবাদ করে এখন কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কেউ কেউ বছর চুক্তিতে জমি নিয়ে ৫০ বিঘা থেকে শুরু করে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর এসব ফসল ঘরে তুলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের অনেকে চরের বাড়িঘরের পাশাপাশি সন্তানদের শহরে রেখে পড়াশোনা ও সেখানে পাকা বাড়িঘরও নির্মাণ করেছেন।

এখন বাঙালি ও যমুনা নদীর চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধুই ফসল আর ফসল। এগুলোর মধ্যে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, নানা জাতের ধান, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, কলাই, মিষ্টি আলু ও গোল আলু, গম, তিল অন্যতম। এসব ফসল বিক্রির সাথে জড়িত থেকে উপজেলার শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র জানায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টনের বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হচ্ছে; যা বাজারে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়।

কৃষক মছিল উদ্দিন বলেন গত বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেন। মাত্র তিন মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলেন। এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। তার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ নয়। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। এসব ফসল বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান এ জেলার কৃষক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যোগী । চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত জাতের শষ্য উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করছেন।

 

 


More News of this category