• January 11, 2025, 11:49 pm

রাজশাহীতে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সেমিনার, প্রসঙ্গ সংষ্কার

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী: 5 Time View :
Update : Saturday, January 11, 2025

সিজিএস কর্তৃক আয়োজিত সংলাপে দেশ ও গনতন্ত্র পুনর্গঠনে সরকার ব্যবস্থাপনায় সকল বিভাগ থেকে প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর জনগন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) একটি গণতান্ত্রিক রাষ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ঢাকা-সহ দেশের প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল ১০ টায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক, শিল্প উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, আধিকারকর্মী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী সংগঠক, সেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের গুরুত্বপ‚র্ণ মতামত জানান।

ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মত একজন মহান ব্যক্তি আমাদের দেশের নেতৃত্বে এসেছেন, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। আমাদের উচিৎ এ সময়টিকে কাজে লাগানো। দেশ সংস্কারের বিভিন্ন ধাপগুলো পুরন করে আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধৈর্য্য সহকারে বর্তমান সরকারকে সময় দেয়া উচিৎ।

আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, নাগরিক সমস্যা সমাধানে সকল পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের উচিৎ টাউনহলটি জনগনকে ফিরিয়ে দিয়ে নাগরিক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো। এছাড়াও, দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের প্রাপ্য অধিকার দেয়া, শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন করা, আইনের যথার্থ ব্যবহার, সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে, আয়কর নিশ্চিতে করা, শিক্ষায় উন্নয়ন বাস্তবায়ন, ইত্যাদি সংস্কারগুলো আবশ্যক।

জিল্লুর রহমান বলেন, ৫ই আগস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবর্তনের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, আকাঙ্খ্যা অনুযায়ী নতুন সম্ভাবনা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি কিনা, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। পাশাপাশি, আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে আমরা যেন আরেকজন ফ্যাসিস্ট তৈরি না করি। এছাড়াও তিনি দেশ পুনর্গঠনে সাংবাদিকদের গুরুত্ব তুলে ধরে জানান, সাংবাদিকদের অধিকার নিশ্চিতে তাদেরকে সবার আগে সাংবাদিক হয়ে উঠতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, দেশ পুনর্গঠনের বিএনপি’র ৩১ দফা রয়েছে। ইনশাল্লাহ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসলে বিএনপি এই দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশ উপহার দিবে। তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন, হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, এ দেশে আর ফ্যাসিজম কায়েম করতে দেয়া হবে না। রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আবু মোহাম্মদ সেলিম, যেকোনো ধরনের সংস্কারের আলচনায় সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের আন্তরিক সম্পর্ক থাকা উচিৎ, এতে দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ত্বরান্বিত করবে।

অনুষ্ঠানে আসা বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের থেকেও বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা উঠে আসে। তৃতীয় লিঙ্গের নারী সুলতানা সাগরিকা জানান, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান, বিশেষভাবে হিজড়া কমিউনিটির মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাজিব ওয়াদুদ বলন, প্রত্যেকটি সংগঠনকেই নিজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গনতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠন চালাতে হবে এবং মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে কোনো পরিবর্তনই টেকসই হবেনা।

পরিবেশ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা এ্যাডকেট এনামুল হক বলেন, ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নে একইসাথে সংবিধান পুনঃলিখনের জন্য জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গনপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে এবং সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। নয়া দিগন্তের ব্যুরো চীফ জানান, রাজনৈতিক কারনে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

আমাদের এটি নিশ্চিতে করতে হবে যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সাংবাদিকতার স্বার্থে সবাই যেন এক থাকে। তিনি আরও যোগ করেন যে, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যেন নিশ্চিতে করা হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তাসিন খান, বর্তমান সরকার শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধীদের নয়, এটি বর্তমান বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলেরও। তাদের উচিৎ এ সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তার মাধ্যমে গনতান্ত্রিক দেশ সংস্কার এগিয়ে নিয়ে দ্রæত নির্বাচন দেয়া।

উল্লেখ্য, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রæত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।


More News of this category