• December 25, 2024, 12:56 am

বিগত  সরকারের  অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও পুনরুদ্ধারের  উপায়

মোঃ আল মামুন 349 Time View :
Update : Saturday, August 17, 2024

বাংলাদেশের  চলমান অর্থনৈতিক  সংকট  একদিনে তৈরি  হয় নি। এই সংকট  তৈরির  পিছনে  অনেক  কারন রয়েছে  । এগুলোর  মধ্যে প্রতি  বছর  ৭৮ হাজার কোটি  টাকা  পাচার, আর্থিক  খাতে রাজনৈতিক বিবেচনায়  নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে  ব্যাংক, বীমা, শেয়ার  মার্কেটে  ব্যাপক লুটপাট, বাংলাদেশ  ব্যাংককে ঠুটোঁ  জগন্নাথ  বানিয়ে  রাখা, অর্থনীতি নিয়ে অতিরঞ্জিত  তথ্য  জাহির  করা, বিভিন্ন  প্রকল্পে লুটপাট, ১৯৭২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত  = ৩৮ বছরে বাংলাদেশের   বৈদেশিক ঋণ  ছিলো ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার  কিন্তু  গত ১৫ বছরে   অতিরিক্ত  ৮০ বিলিয়ন  মার্কিন  ডলার  ঋণ  করা  , ৫৩ বছরের   ইতিহাসে সবচেয়ে  বেশি টাকা ছাপানো  হয় বিগত অর্থবছরে    ১ লক্ষ  কোটি  টাকার ওপরে , দেশের সকল স্বায়ত্তশাসিত  প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি  টাকা  বের করে অর্থনৈতিক  সক্ষমতা  দূর্বল করা,  অলাভজনক  প্রকল্পে  বিনিয়োগ করা, কুয়িক রেন্টাল বিদ্যুৎ  খাতে হাজার  হাজার কোটি  টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের  নামে লুটপাট  যেটা জায়েজ করার জন্য  সংসদে  দায় মুক্তি আইন পাস করা,  রাজনৈতিক  বিবেচনায় ভারতের  আদানি  কোম্পানিকে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে লক্ষ  কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেয়া, রুপপুর  বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার কাজ থেকে রাজনৈতিক  সমর্থনের জন্য ৩ বিলিয়নের কাজ ১৩ বিলিয়নের চুক্তি করা (উল্লেখ্য  রাশিয়া  ভারতে একই প্রকল্প  ৩ বিলিয়নে  সম্পন্ন  করেছিল),  ব্যবসায়িদের অভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার  ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে  টাকা পাচার, হোন্ডির মাধ্যমে  পুঁজি পাচারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে রেমিটেন্স  কমা, তিনটি  বিতর্কিত নির্বাচনের পরে প্রত্যক্ষ দেশীয় ও বিদেশি  বিনিয়োগ  কমা, ২০১০ সালে বিদেশ থেকে এনজিও  অর্থায়ন  ঠেকাতে আইন পাস করা   যাকে  অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ব্লাক বা কাল আইন হিসাবে  অভিহিত  করছিলো । ফলে পশ্চিমা  অর্থায়ন না আসার   কারনে বেশিরভাগ  এনজিও  বন্ধ  হয়ে যায় ।  ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধ্বস  ও   ২০১৬ সালে হলি আর্টিজেনের  হামলার পরে  হাজার হাজার   গার্মেন্টস বন্ধ হওয়া, প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন  ডলারের বৈদেশিক ঋনের  সুদ আসল সহ প্রতিবছর প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের    কিস্তি পরিশোধের চাপ সহ নানা কারণে  দেশ অর্থনৈতিক  দেউলিয়ার দ্বার প্রান্তে  গিয়ে ঠেকেছে ।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া  যেতে পারে 
প্রথমত দেশের  প্রখ্যাত  সকল অর্থনীতি বীদদের নিয়ে একটি  শক্তিশালী  Taskforce গঠন  করতে হবে। যারা কিনা দেশের  অর্থনৈতিক সংকটের সত্যিকার তথ্য গুলো উদঘাটন  করে জনসমক্ষে  প্রকাশ  করবে এবং  পুনরুদ্ধারের  জন্য  দ্রুত কাজ করবে।
দেশের সকল  জনগনকে  বিশেষত   প্রবাসীদের   আস্থায় নিয়ে আসতে হবে যাতে করে তারা ব্যাংকিং বা বৈধ  চ্যানেলে টাকা দেশে পাঠায়  ।  হোন্ডির মাধ্যমে  টাকা পাঠানোর সাথে জড়িত  সকল অপরাধীদের চিহ্নিত  করে কঠোর  আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে । প্রবাসীদের  দীর্ঘদিনের বঞ্চনা  রোধে  একটি  স্বচ্ছ  ও শক্তিশালী  কমিশন গঠন  করতে হবে যারা কিনা তাদের সকল সমস্যা গুলো নিরসন করবে। রোশান ডিজিটাল  একাউন্ট  নামে একটি  ব্যাংকিং সেবার উদ্ভাবন করে যেখানে  প্রবাসীরা এই ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রা  জমা রাখবে।  ইতিমধ্যে এই পদ্ধতির    মাধ্যমে  পাকিস্তান সরকার   ৮ বিলিয়ন  মার্কিন ডলার  সংগ্রহ  করতে সক্ষম  হয়েছে ।
 আর্থিক  খাতে সকল দুর্নীতির বিচার  বিভাগীয়  কমিশন  গঠন করা। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি  ঋণের নামে  যে লুটপাট হয়েছে  সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে  যারা প্রকৃত অপরাধীদের আইনের  আওতায়  এনে টাকা উদ্ধার  করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পুর্নাঙ্গ  স্বায়ত্তশাসন  দিতে হবে । যে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিগত সরকার    জিইয়ে রেখেছিলো টাকা ছাপিয়ে । সেই ব্যাংকগুলোকে অতি দ্রুত দেউলিয়া   ঘোষনা করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত ও কর্মচারীদের গোল্ড হ্যান্টসেকের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে।
 বিদেশ থেকে  পাচার কৃত টাকা ফেরত আনার জন্য  আলাদা  কমিশন  গঠন করতে হবে । একই সাথে প্রবাসীদের সহায়তায় পাচারকারীদের সঠিক  অবস্থান  নির্ণয়  ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের  সহায়তা  নিয়ে টাকা উদ্ধার  করতে হবে । এছাড়া  পাচার রোধে  আমদানি রপ্তানির পরিমান কঠোর ভাবে তদারকি  করতে হবে।
 নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস  আমদানি তে গুটিকয়েক  ব্যাবসায়ীকে একচেটিয়া প্রভাব বন্ধ  করে সকল ব্যবসায়ীর জন্য  উন্মুক্ত  করা যার ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে  ভূমিকা  রাখতে  সক্ষম  হবে।
 পন্যের সাপ্লাই চেইন সহজীকরণের মাধ্যমে    কৃষকদের নায্য দামের ব্যবস্থা এবং  সকল পণ্যের  ক্রয় ক্ষমতায় নিয়ে আসা । বাজার সিন্ডিকেট  ভেঙে  কঠোর  হস্তে দমন করতে হবে ।
 দেশের অভ্যন্তরে যারা অবৈধ  টাকার মালিক তাদের  বিরুদ্ধে  বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে টাকা উদ্ধার  ও সম্পত্তি  বাজেপ্ত  করা। এছাড়া  দেশে সিন্ডিকেটের হাতে প্রচুর  পরিমান   ডলার মজুদ রয়েছে  যা  উদ্ধারের মাধ্যমে  কিছুটা হলেও ডলার সংকট  কাটিয়ে  উঠা সম্ভব ।
 দেশের  অভ্যন্তরে  অবৈধ বিদেশি নাগরিক ( ২৬ লক্ষ)  যারা বিভিন্ন  পেশায়  নিয়জিত  আছে  তাদের  বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়া সেই সাথে যেসব বিদেশি  নাগরিক কর ফাঁকি দিচ্ছিলো তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে কর আদায়ে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া ।
 দেশের স্বাস্থ্য , শিক্ষা  ও পর্যটন  খাতে জিডিপির  বরাদ্দ  বাড়ানো   এবং  এইসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ  বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব  যার পরিমাণ  হতে পারে প্রায় ১০ বিলিয়ন  মার্কিন  ডলার ।
 বিগত সরকারের  সকল রাজনৈতিক  ও অপ্রয়োজনীয়  প্রকল্প  বাদ দিয়ে  ও কিছু   প্রকল্প  সাময়িকভাবে  বন্ধ  করে এডিবির  বাজেট  কমিয়ে  শুধু স্বাস্থ্য   ও শিক্ষা খাতে জিডিপি  বাড়াতে হবে যাতে করে  জনগণ  সরাসরি  সুবিধা  পায়।
বিগত সরকারের সীমাহীন দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিকে দেউলিয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য উপরের  সুপারিশ গুলো বিবেচনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের  প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর  ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিমন্ডলে ইমেজকে ব্যবহার করা যেমন অধিক প্রয়োজন তেমনি দেশের দলমত নির্বিশেষে  জনগণের সার্বিক সহায়তা  অপরিহার্য ।
 লেখক:  মোঃ আল মামুন,   শিক্ষক  ও কলামিস্ট  ।


More News of this category