বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দেশের কৃষি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শহর, গ্রাম কিংবা উপজেলায় ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুনের অভাবের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার একর উর্বর কৃষি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ প্রবণতা যদি এখনই রোধ করা না যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ মারাত্মক সংকটে পড়বে।
অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়া। বর্তমানে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কৃষি জমি কমে গেলে তাদের আয়ের উৎসও সংকুচিত হবে, যা বেকারত্ব বাড়াবে এবং দারিদ্র্যের হার আরও বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু, খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
অপরিকল্পিত নির্মাণের আরেকটি বিরূপ প্রভাব হচ্ছে পরিবেশের উপর। কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে বলে দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। বিশেষত, পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে।
তাই, এই সমস্যার সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে কৃষি জমি রক্ষা করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। প্রতিটি অঞ্চলে জমি ব্যবহার পরিকল্পনার (Land Use Plan) সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে বোঝাতে হবে যে কৃষি জমি রক্ষা করা মানে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করা। কৃষি জমি ব্যবহারে স্বল্পমেয়াদি লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে চিন্তা করা উচিত।
বাংলাদেশকে যদি ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করতে হয়, তবে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পারলেই কেবল কৃষি জমি এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব হবে।