• December 5, 2024, 9:19 am

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের  বাণিজ্যিক সংকট ও সম্ভাবনা

মো: আল মামুন 113 Time View :
Update : Monday, August 19, 2024

বাংলাদেশ  একটি আমদানি  নির্ভর  দেশ। পিপিপি  অনুযায়ী   (ক্রয়  ক্ষমতা)  বিশ্বের মধ্যে  বাংলাদেশ ৪১ তম অর্থনীতির দেশ ।  বাংলাদেশ   চীন ও ভারত  থেকে সবচেয়ে  বেশি পণ্য  আমদানি  করে  যথাক্রমে  ১৯.৩৫ বিলিয়ন  ও  ১৩.৬৯ বিলিয়ন  মার্কিন  ডলারে।  ২০২১ -২০২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশের আমদানি ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন  ডলার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর  পৃথিবীর অনেক দেশের  সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক  বৃদ্ধি  পেলেও  প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে  মিয়ানমারের সাথে সেই তুলনায়  খুবই স্বল্প   পরিমাণ বৃদ্ধি  পেয়েছে । আমরা আলোচনা  করবো কি কি কারণে বাণিজ্যিক  সম্পর্ক  নিবিড় হয়নি।
প্রথমত, ১৯৬২  সাল থেকে সামরিক  জান্তা সরকার  নিজেদের  ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা ও তাদের উদাসীনতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা  দেশগুলো  ও  জাতিসংঘের বিভিন্ন  নিষেধাজ্ঞার  কারণে বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ককে  এগিয়ে নিতে পারেনি।
তৃতীয়ত, রোহিঙ্গা  সমস্যার স্হায়ী সমাধানের অভাবে মিয়ানমারের  সাথে মনস্তাত্ত্বিক  ও কূটনৈতিক  সম্পর্ক  মাঝে মধ্যেই তলানিতে চলে যায়।
চতুর্থত,  সীমান্ত  বিরোধ  এবং বঙ্গোপসাগরের জল সীমা নিয়ে সৃষ্ট  দ্বন্দ্বের কারণে বাণিজ্যিক  সম্পর্ক  তৈরি  হয়নি।
পঞ্চমত,   ভূ-রাজনীতির প্রভাব ও পরাশক্তি গুলোর মধ্যে  সৃষ্ট  দ্বন্দ্বের কারণে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব  হয় নি।
ষষ্ঠত,  মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক   সরকারের অনুপস্থিতি, সামরিক  জান্তাদের একমুখী  স্বার্থ, বিভিন্ন  জাতি গোষ্ঠির মধ্যে  দ্বন্দ্ব -সংঘাত, শক্তিশালী  কর্পোরেট শ্রেণি ও সুশীল  সমাজের  অনুপস্হিতিসহ বিভিন্ন  কারণে তা সম্ভব  হয় নি।
সম্পর্ক  উন্নতির উপায় সমূহ :
চীনের মাধ্যমে সামরিক  জান্তার সাথে  একটি  উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি  প্রেরণ  ও একটি  স্হায়ী  বাণিজ্যিক  ডেস্ক চালু  করতে হবে।  এছাড়া  আসিয়ানভুক্ত প্রভাবশালী  দেশগুলো ও বিভিন্ন  আঞ্চলিক  পরাশক্তি  গুলোকে কাজে লাগিয়ে  সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে।   রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্হায়ী  সমাধানের জন্য  দরকার আমাদের  জাতীয়  ঐকমত্যের  সরকার ।
মিয়ানমারের  সাথে সাংস্কৃতিক  বিনিময় বৃদ্ধি, তাদের  বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর  সাথে  আমাদের  দেশের  বিশ্ববিদ্যালয়ের  যোগাযোগ  বৃদ্ধি  এবং  তাদের দেশের  বিভিন্ন  স্টেক হোল্ডারদের সাথে    সম্পর্ক  জোরদার  করতে হবে। মিয়ানমারের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী গুলোর মধ্যে যে জটিল  সমীকরণ  ও দ্বন্দ্ব বিরাজমান রয়েছে  তা খুবই  নিখুঁত ভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে  সকল গোষ্ঠীর সাথে  যোগাযোগ  বৃদ্ধি করতে হবে ।
মিয়ানমারে প্রচুর  পরিমান  তেল ও গ্যাস রয়েছে  যা বাংলাদেশ  আমদানি  করার  যথেষ্ট  সুযোগ  রয়েছে ।
দুই  দেশের সীমান্তে  স্হল বন্দরের  সংখ্যা  বৃদ্ধি করে  ও অন্যানা বাঁধা  দূর করে উভয়  সরকারের  রাজস্বের  পরিমাণ  বাড়ানো  সম্ভব।
বাংলাদেশের তৈরিক্রিত কৃষি যন্ত্রপাতি,   সস্তা  ও সহজলভ্য  পোশাক  মিয়ানমারের বাজারে  প্রবেশের  সুযোগ  রয়েছে ।  মিয়ানমারের  মধ্য  দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে  সুদূর  থাইল্যান্ড  পর্যন্ত  সংযুক্তির মাধ্যমে  পণ্যের   আমদানি – রপ্তানি  সহজীকরণ  হতে পারে । উভয়  দেশের  পর্যটন  এলাকার  সর্বোচ্চ  ব্যবহার নিশ্চিত  করা সম্ভব ।  মিয়ানমারের  ঐতিহাসিক  এলাকা  এবং  বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও  কক্সবাজার  এলাকায়  পর্যটন  আকর্ষণ  বৃদ্ধি  করা সম্ভব । এছাড়া  বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের চাহিদা  মেটানোর  জন্য  মিয়ানমারের  পতিত জমি দীর্ঘমেয়াদে লিজ নিতে পারে।
বর্তমান  বিশ্ব বাস্তবতায় বাণিজ্যিক  সম্পর্কের ভিত্তিতেই  সম্পর্ক মজবুত  হয়। ব্যাপক বাণিজ্যিক স্বার্থ  না থাকলে কোন দেশই অন্য দেশের  সংকটকে বেশি  গুরুত্ব দিতে চায় না। বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যাদের সাথে রাজনৈতিক  সম্পর্ক না থাকলেও অর্থনৈতিক  সম্পর্ক চলমান রয়েছে উভয় দেশের জাতীয়  স্বার্থ অক্ষুন্ন  রাখার জন্য। আবার বিশ্বের  অনেক দেশ আছে যাদের সাথে পূর্বে তিক্ত সম্পর্ক  ছিলো কিন্তু  বর্তমানে অর্থনৈতিক  ও ভৌগোলিক   বাস্তবতায়  দেশগুলোর  সাথে  সম্পর্ক নিবিড়  রয়েছে ।
এক্ষেত্রে  আমরা আমেরিকার  সাথে  ভিয়েতনামের  সমসাময়িক   বাণিজ্যিক সম্পর্ককে  একটি  ভালো  দৃষ্টান্ত  হিসেবে  দেখতে   পারি । তাই মিয়ানমারের  সাথে বাণিজ্যক  সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে   সংকটকালীন সময়ে দেশের কৃষি পন্যের চাহিদা মেটানো  যেমন সম্ভব  তেমনি  বাংলাদেশ রোহিঙ্গা  সমস্যা  সমাধানে নতুন দুয়ার খুলতে পারে  বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
লেখক : মো: আল মামুন, শিক্ষক ও কলামিস্ট ।


More News of this category